ছোটবেলা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পূর্ব পর্যন্ত গ্রামেই কাটিয়েছি। সেই সুবাদে গ্রামাঞ্চলগুলোতে অটিজম ব্যাপারটাকে কিভাবে নেয়া হয় সেটা প্রত্যক্ষভাবে দেখার সুযোগ পেয়েছি।আমাদের বাংলাদেশে অটিজম নিয়ে এখন পর্যন্ত যত কাজ এবং রিসার্চ হয়েছে তা বহিঃবিশ্বের তুলনায় অনেক কম। আমাদের দেশের সাধারণ জনগণ এই ব্যাপারে এখনো তেমন একটা সচেতন না।
শহরাঞ্চলে কিছুটা সচেতনতা থাকলেও গ্রামাঞ্চলে একেবারে নেই বললেই চলে। বাংলাদেশের মানুষ এখনো ঠিকভাবে জানতে পারেনি অটিজম কি? কেন হয়? কিংবা অটিজমে আক্রান্ত মানুষদের সাথে কিভাবে কথপোকথন চালিয়ে যেতে হয় এবং অন্যান্য। গ্রামে থাকার সুবাদে একটা কঠিন সত্য উপলব্ধি করতে পেরেছি আর সেটা হচ্ছে গ্রামাঞ্চলে অটিস্টিক শিশুকে অনেকে পাগল, আলগা দোষ, বাবা-মায়ের অভিশাপ ইত্যাদি কুসংস্কারে সংজ্ঞায়িত করে থাকেন, যা সম্পূর্ণ ভুল ও ভিত্তিহীন। এরূপ বিশ্বাসের ফলে অনেক সময় শিশুর ভুল চিকিৎসা হয়ে থাকে, যা শিশুর জীবনের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। তাদেরকে মানুষ সেভাবেই নেয় যেভাবে একটা পাগলকে নেয়।
অটিজমে আক্রান্ত একজন মানুষ,একজন শিশু একটা পাগলের সমান না। তারা বিভিন্ন ব্যাপারে অবহেলার শিকার হয়। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় তাদেরকে শিকল দিয়েও বেধে রাখা হয়।
একজন সুস্থ স্বাভাবিক চিত্তের মানুষ হিসেবে একবার চিন্তা করে দেখুন, একটা শিশু যখন মানসিক ভাবে বিকাশজনিত সমস্যায় ভোগে যাকে আমরা অটিজমে আক্রান্ত বলি, এই শিশুটিকে সাধারণ জীবনযাপন করতে সাহায্য করাটা আমাদের উচিৎ নয় কি?
যেহেতু অটিস্টিক শিশুর শারীরিক গঠন দেখতে স্বাভাবিক হয় তাই এদের সমস্যা নির্ণয় করা অনেকাংশে জটিল। অটিস্টিক শিশু নির্ধারণ করার জন্য কোনো মেডিকেল টেস্ট নেই। শিশুর আচার-আচরণ, তার বয়স অনুপাতে বুদ্ধির বিকাশ, কর্মদক্ষতা, ভাষাগত দক্ষতা, বুদ্ধিমত্তা, সামাজিক যোগাযোগের ক্ষমতা ইত্যাদি বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেই শিশু অটিস্টিক কিনা নির্ধারণ করা হয়।আর আমাদের গ্রামাঞ্চলের মানুষরা এই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নয় যে একটি অটিস্টিক শিশুকে একজন মনোস্তাত্ত্বিক গবেষক কিংবা SLP (Speech and language pathologist) এর কাছে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা সম্ভব।
সঠিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা পেলে অটিস্টিক শিশু সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অটিস্টিক শিশু হয়তো আর সব সাধারণ শিশুর মতো সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক আচরণ করতে পারবে না। কিন্তু সাইকোথেরাপি বা স্পেশাল শিক্ষাদানের মাধ্যমে এসব শিশুকে ৮০-৯০ ভাগ পর্যন্ত সুস্থ করে তোলা সম্ভব। এর ফলে শিশুটি নিজের একান্ত ব্যক্তিগত কাজ থেকে শুরু করে পারিবারিক ও সামাজিক নানা কাজেও অংশগ্রহণ করতে পারে। চিকিৎসা গ্রহণ করে সম্পূর্ণ সুস্থ-স্বাভাবিক হয়ে বিয়ে ও সংসার করাও অনেকের পক্ষে সম্ভব।
মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। তাদেরকে জানানো প্রয়োজন। অটিজমকে ইতিবাচিক দিকে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।