মহামারী ও টেলিথেরাপি: শ্রবনচিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের উন্মোচন

কোভিড-১৯ মহামারী আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে অনেক কিছু দেখিয়ে যাচ্ছে। বিশেষকরে স্বাস্থ্যসেবা খাত এবং শিল্পের বর্তমান কাঠামোর অপর্যাপ্ত কার্যকরিতা এখন সুস্পস্ট। আমি একথা বলতে পারি যদি আমেরিকানরা আগে থেকে জানতো যে মানুষের দৃষ্টি, শ্রবন, ডিমেনশিয়া, ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ, মস্তিষ্ক এবং শারীরিক বিভিন্ন চিকিৎসা অবস্থার (Medical Condition) কার্যকরিতা এবং অবকাঠামো এমন অপর্যাপ্ত তবে এবিষয়ে বিভিন্ন আবিষ্কার, প্রযুক্তির হিড়িক লেগে যেতো। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন, আমরা আগে কেউ বুঝতে পারিনি। কিন্তু এখন এই ঘাত পেরিয়ে আমাদের এইসব ক্ষেত্রে আধুনিকায়ন এবং নতুন কাঠামোবিন্যাস নিয়ে চিন্তা করা আবশ্যক হয়ে উঠেছে।

পরিসংখ্যান বলে ৩৭ মিলিয়ন আমেরিকান কোনো না কোনো ধরনের শ্রবন সমস্যায় ভুগছেন এবং এখানে ASHA নিবন্ধিত অডিওলোজিস্ট আছেন প্রায় ১৩,৬১০ জন। (উল্লেখ্য বাংলাদেশে এরকম কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায়না; এরকম পরিসংখ্যান প্রোজেক্ট বাস্তবায়ন করা এখন অতীব জরুরি- অনুবাদক)। সুতরাং স্বাস্থ্যখাত বিশেষ করে শ্রবন সম্পর্কিত রোগ বিষয়ক খাতটি এখন দিনদিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

অডিওলজিতে টেলিপ্রাক্টিস সেবায় অন্তর্ভুক্ত করা যায় “নন ডায়াগনস্টিক শ্রবণ সমস্যা পরীক্ষাসমূহ” উদাহরণস্বরূপ একটি অনলাইন টুল অথবা সফটওয়্যার ভিত্তিক পরীক্ষা মডিউল যেখানে বিভিন্ন মাত্রার ফ্রিকুয়েন্সি সাউন্ড এবং নয়েজ দিয়ে একজন মানুষের শ্রবণ সীমা নির্ধারণ করা যাবে। শ্রবনসহযোগী যন্ত্র, টিনিটাস (Tinnitus), শ্রবন সমস্যায় আক্রান্ত মানুষটির সাথে অন্যদের যোগাযোগ বা তার স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার কৌশলবিষয়ক পরামর্শ টেলিথেরাপির মাধ্যমেই সূচারুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব। এমন কি উচ্চ গতির ইন্টারনেট সুবিধা যেহেতু সবখানেই সহজলভ্য তাই ভিডিও কলে বিভিন্ন অটোস্কোপিক পরীক্ষাও সম্ভব।

তবে হ্যা কোন অডিওলজিস্ট সেবা দিচ্ছেন সেটি দেখে নেয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। অনিবন্ধিত কিংবা হাতুড়ে অডিওলজিস্ট যেনো এই সুযোগ নিতে না পারে সেটি নজরদারি করা আবশ্যক। এরকম ডিজিটাল অবকাঠামো নির্মাণ সময় এবং ব্যায়সাপেক্ষ কিন্তু সাধারণ অডিওলজিক্যাল সেবাসমুহ এখনই প্রদান করা সম্ভব । বিশেষ করে এমন মহামারীর মাঝে এটি গুরুত্বপূর্ণও বটে।

তবে এই সেবা চালু করার পূর্বে সবচেয়ে প্রথম কাজ হলো অডিওলজিস্টদের মিডিয়া, লেখালেখির মাধ্যমে সবার কাছে এ সম্পর্কিত তথ্য পৌঁছানো এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

এই টেলিপ্রাক্টিস শুধুমাত্র বর্তমান চ্যালেন্জ মোকাবেলা না বরং নিকট ভবিষ্যতে শ্রবনচিকিৎসার সুযোগ এবং সহজলভ্যতার ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করবে।তবে যেহেতু এখানে মনিটরিং এর সুযোগ কম তাই অডিওলজিস্টকে স্বপ্রনোদিত হয়ে পেশাদারিত্ব এবং নৈতিক দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে এই পেশা এবং সেবা খাতের সম্মান বজায় রাখতে হবে।

[এই লেখাটির মূল ভাবনা  ASHA Leader ম্যাগাজিনে প্রকাশিত আবি মালাওয়ের নামক একজন অডিওলজিস্ট এবং প্রশিক্ষকের একটি লেখা থেকে নেয়া হয়েছে]

Leave a Comment

Skip to content