সক্ষমতা অক্ষমতার কোনো প্রমাণ মানদন্ড না থাকলেও আমাদের সমাজ চোখের সামনে এমন এক লেন্স এঁটে দিয়েছে যাতে পৃথিবীর পাঁচ ভাগের একভাগ (২০ শতাংশ) মানুষদের আমরা অক্ষম চিন্হযুক্ত দেখতে পাই। এই দৃষ্টিকোণ আমাদের মাঝে সৃষ্টি করে এবেইলিজম নামের এক ভয়ংকর রেসিজম।আমরা নিজের সাথে তুলনা করে সক্ষম-অক্ষম, ভালো-মন্দের সার্টিফিকেট দিয়ে বেড়াই। আমরা যারা এবেইলিজম এর লেন্স উতরিয়ে বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্নদের আমাদের মতোই এই ব্যাপারটি স্বীকার করি তাদের মাঝেও আছে এক সিমপ্যাথেটিক চিন্তাকোন। অর্থাৎ আমরা ভাবি একজন বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন হলো অবুঝ, তার সবসময় সাহায্য দরকার এরকম সাধারণ ধারণা থেকে আমরা চ্যারিটি অথবা সিমপ্যাথি দেখানোর চেষ্টা করি। কিন্তু বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষেরাও আমাদের মতোই মানুষ, তার আছে সকল ধরণের চাহিদা, চিন্তা, সন্তস্টি। তারাও বুঝতে পারে মান অপমান, তাদেরও আছে হীনম্মন্যতা কিংবা আত্মবিশ্বাস, তাদের মাঝেও তৈরি হয় ভালোবাসা সংসারের প্রতি আকুলতা, তারাও অনুভব করে যৌনতার আকাঙ্ক্ষা। আমরা অধিকাংশ সময়েই বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের শিশু, অবুঝ, মুখাপেক্ষীর ছাঁচে ফেলে করে ফেলি ডিহিউমানাইজেশন অর্থাৎ তাদের চিন্তা, মত, বিশ্বাস এর চেয়ে তার অসহায়ত্বকে প্রকট করে তোলা হয়। একটি স্টেরিওটাইপ এর অবতারণা করা হয় যে- একজন বিশেষ শিশু দেখলেই তাকে অনুমতি ছাড়াই কোলে নেয়া যায়, তাকে জড়িয়ে ধযা কিংবা চুমু খাওয়া যায়, কোনো মানুষ একটু পা টেনে হাটলেই তাকে দৌড়ে গিয়ে বিনা অনুমতিতে হাত ধরে হাটতে সাহায্য করতে হবে, হুইলচেয়ারে কেউ বসে আছেন তাকে গিয়ে হুইলচেয়ার ধাক্কা দিতে হবে। এই স্টেরিওটাইপ বা অতিরিক্ত সিমপ্যাথি বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষের জন্য একটি অবমাননার এবং তার আইডেন্টি ডিনায়াল এর অন্য নাম মাত্র।
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের সাহায্য অবশ্যই দরকার কিন্তু আপনার উচিত হবে তার কাছ থেকে অনুমতি নেয়া যে তিনি আপনার সাহায্য চাচ্ছেন কিনা। একজন কথা বলতে না পারা মানুষ অথবা যিনি সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ কিংবা অন্য কোনো পদ্ধতিতে যোগাযোগ করেন তার সাথে যদি সম্ভব হয় ঐ পদ্ধতিতেই কথা বলুন, যদি আপনি যোগাযোগ এর ওই প্রক্রিয়াটি বুঝতে না পারেন তবে তাকে জানান যে আপনি তার সাথে এভাবে কথা বলতে পারছেন না। যখন একজন সাইনার এর সাথে আপনার কথা বলতে হয় এবং তার সাথে ইন্টারপ্রেটর থাকে তবে ইন্টারপ্রেটরের দিকে নয় বরং সাইনার দিকেই তাকিয়ে কথা বলুন। একজন হিয়ারিং ইমপেয়ার্ড বা বধির মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ এর জন্য অযথা চেঁচামেচি বা জোরে কথা না বলে কাধে বা হাতে স্পর্শ করে ডাকুন। অর্থাৎ তাদের সাথে এমন কিছু করবেন না যা অশোভন হয়। মনে রাখবেন বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষেরা ইতর কিংবা ছোটো বাবু না তারাও প্রাপ্তবয়স্ক হয়, তাদেরও আছে নিজস্ব চিন্তা এবং অস্তিত্ব। সুতরাং ডিহিউমানাইজ নয় বরং রেসপেক্ট ই হোক বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন জনগোষ্ঠীর প্রতি আমাদের আগামীর আচরণ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ বৈকল্য (Communication Disorders) বিভাগের সম্মান শ্রেণীতে পাঠগ্রহন চলছে। প্রতিবন্ধকতা, সীমাবদ্ধতা, যোগাযোগ বৈকল্য বিষয়ক তাত্ত্বিক এবং প্রায়োগিক দিক নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করছি। উদ্ভাবনী গবেষণামূলক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সামাজিক পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণ থেকে চিন্তাকে ভাষায় রূপ দেয়ার চেষ্টায় নিয়োজিত।