সৃষ্টিকর্তা বলছেন-
অবশ্যই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সর্বোত্তম অবয়বে (৯৫:৪)
তারমানে কি এই নয় যে, সকল মানুষই সর্বোত্তম গঠন পেয়েই পৃথিবীতে এসেছে বা সে পরবর্তীতে যে পরিস্থিতির শিকারই হোক না কেন তার অবয়ব কিংবা বাহ্যিকতা সবসময় সর্বোত্তমই থাকবে। কিন্তু এটা আসলে কেইবা মানছে? কেইবা জানে সে কথা? বা জেনেও কে ধারন করছে নিজের মাঝে?
আপনার পরিবারে কি সামাজিকভাবে উদ্ভাবিত “প্রতিবন্ধী” নামের ট্যাগ বহনকারি সমাজচ্যুত কোনো সদস্য আছে? যদি থাকে তবে নিশ্চয়ই আপনি আমার কথার মাঝে নিজেকে খুঁজে পাবেন। আর যদি না থাকে তবে শুনুন সেই ঘরের কিছু কথা যে ঘরে তেমনই একজন শিশুর উপস্থিতি রয়েছে।
হাসপাতালকে তো আপনারা সকলেই ভয়ের চোখে দেখেন। সেখানে সহজে আপনার আগমন ঘটেনা। তবে তাদের জন্য কিন্তু হাসপাতালই নিজের ঘর, ডাক্তার-নার্সরা হলেন তাদের আত্মীয়, আরও শত শত রোগী হলেন তাদের প্রতিবেশী, ওষুধ হচ্ছে তাদের ঠিক ভাত-মাছের মতই উপাদেয় খাবার। সেখানে গিয়ে তাদের পরিবার তার সন্তানকে নিয়ে, যাকে আপনারা প্রতিবন্ধী বলে সমাজচ্যুত করেছেন, রাতের পর রাত নির্ঘুম কাটিয়ে দেয়। সেসব সন্তানদের সামাজিক ব্যবস্থা এক এক হাশপাতালের কোনায় কোনায় গড়ে ওঠে।
খুব সুন্দর না পরিবেশটা? এত নির্ঘুম রাত পার করে মায়ের মন,মগজ, মানসিক স্বাস্থ্য বুঝি খুবই ভাল থাকে? নাহ!
ভুল ভাবছেন! কখনও তাদের মনে হয় –
হায়! এ জীবন দিয়ে আর কি হবে! আমার এই সন্তানটা বড় হয়ে কি বা করবে? বরং সবার জন্য আরও সমস্যাই সৃষ্টি করবে। সন্তানসহ মায়ের নিজেদের শেষ করে দেয়ার প্রচেষ্টা সন্তানের রাত দুইটার চিৎকারযুক্ত কান্নায় যেন মিলিয়ে যায়। ফজরের আযানের সাথে যেন আবার নতুন একটা সূচনা, নতুন একটা স্বপ্ন দানা বাঁধে মায়ের মনে। হ্যাঁ, আমার সন্তানটা সুস্থ হবে ইনশাআল্লাহ!
যাহোক এটাতো প্রাথমিক পর্যায়ের কথা বলছি। আরেকটু বড় হলে কখনও তাকে নিয়ে কোনো লোকসমাজে গেলেই হয়েছে! চিড়িয়াখানা থেকে হঠাৎ কোনো আকর্ষণীয় জীব-জন্তুর ছাড়া মিললো বুঝি! সবাই টানা টানা চোখে দেখতে থাকবে। কেউ কেউ মনে মনে বা চুপিসারে বলে ওঠবে-
হায়! মা-বাপগুলা কি পাপটাই না করছিলো আল্লাহই জানে!
এসব শুনে বাড়ি ফিরে মা-ও বিড়বিড়িয়ে বলতে থাকে- “কোন পাপের লাইগা এইটা হইলো আল্লাহ?” আর কয়েকদিন চোখের পানির স্রোতধারা তো আছেই।
ধরুন এই প্রতিবন্ধী সন্তানগুলোর বাবা-মায়েরা যতদিন বেঁচে আছেন সেইসব বছরগুলোতে মা কখনও একটা ভাল শাড়ী পড়ে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার কথা ভুলে যান। কবে কোথায় বের হয়ে মুক্ত আকাশটা দেখেছিলেন বা মুক্ত আকাশ বলতে কিছু আছে কিনা তা তাঁর সন্তানের চোখের দিকে তাকিয়েই হারিয়ে ফেলেছেন অনেক আগে। বাবার ভবিষ্যত নিয়ে অনেক কিছু করার চিন্তা ছিল। সবই এখন তার ভালবাসার সন্তানটাকে ঘিরেই ঘুরপাক খায় যাকে আপনারা প্রতিবন্ধী বলেছেন, সমাজ থেকে বিচ্যুত করেছেন, সমাজের আর পাঁচটা মানুষ হতে আলাদা করেছেন, পাপের দোষে দোষী করে হেয় দৃষ্টি দিয়ে ছিন্নভিন্ন করেছেন তার পরিবারকে।
আর কত দূরে ঠেলে দিবেন? আপনাদের থেকে পাওয়া মনের শত শত কষ্ট যন্ত্রনা ব্যাথা নিয়ে তারা সমাজে আপনার সাথেই কতটা হাসিমুখে জীবন চালাচ্ছে। আর আপনি? তাদের জন্য কি একটু ভালবাসার অনুভূতিও মনে ধারন করেছেন কখনও?