রূপালি পর্দায় তারা: বারফি

আইএমডিবি রেটিং ৮.৯, রোটেন টমেটোতে ৮৯% ফ্রেশ, বক্সঅফিস হিট, ৭টি ফিল্মফেয়ার, ১৭টি আইফা এওয়ার্ড এর মতো বড় বড় এওয়ার্ড সহ ভারত হতে নির্বাচিত বেস্ট ফরেইন ফিল্ম ক্যাটাগরিতে একাডেমী এওয়ার্ডে মনোনীত-এই সকল সাফল্য যার ঝুড়িতে সেই মুভিটার নাম বারফি। অসম্ভব সুন্দর তিনজন মানুষের মন ছুঁয়ে যাওয়া গল্প এবং অভিনয় দিয়ে বারফি জায়গা করে নিয়েছে অসংখ্য সিনেমাপ্রেমীদের মনে।

গল্পের মূল চরিত্র মারফি, জন্মগতভাবে মূক ও বধির। কেউ নাম জিজ্ঞেস করলেই এমনভাবে উচ্চারণ করে যা শুনে মনে হয় বারফি। এই থেকেই সে সবার কাছে পরিচিত বারফি নামে। বারফি প্রাণোচ্ছল,আশাবাদী একজন মজার মানুষ। সবার মতে,বারফি মন দিয়ে ভালোবাসতে পারে। যে ভালোবাসায় নেই কোনো ভেজাল, নেই কোনো স্বার্থ। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও সে নিজেকে ভালোবাসে, তার জীবনকে ভালোবাসে। বারফি আমাদের বিশ্বাস করতে শেখায় জীবনের খুব ছোট ছোট মুহূর্ততেই আনন্দ খুঁজে পাওয়া সম্ভব।

ঘটনাক্রমে বারফির জীবনে আবির্ভাব ঘটে শ্রুতি এবং ছোটবেলার বন্ধু ঝিলমিলের। ঝিলমিল একজন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। ঝিলমিল ৬বছর বয়স থেকে বড় হয় এক পরিচর্যা কেন্দ্রে। সমাজ কী ভাববে এই ভেবে তার মা-বাবার খুব লজ্জা হয়। এমনকি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নিজের মা-ই কিনা তাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল! এ যেন আমাদের সমাজের,আমাদের আশেপাশেরই প্রতিফলন। একজনের প্রতিবন্ধকতাকে মানতে খুব কষ্ট হয়, তাদের দূরে ঠেলে দেয়াই নাকি শ্রেয়। তবে তাদের আপন করে নেয়ার মতো,তাদের স্নেহ দিয়ে আঁকড়ে ধরে রাখতে পারার মতো মানুষও আছে। যেমন এই সিনেমাতে ঝিলমিলের নানা এবং পরিচর্যা কেন্দ্রের মানুষ। নানার দেয়া গ্লাসের গোলক ঝিলমিলের খুবই প্রিয়। এই গোলকে পৃথিবীটা যেমন উলটো, তেমনি ঝিলমিলের এই পৃথিবীটাকে দেখার চোখও আলাদা, ১০টা স্বাভাবিক মানুষ থেকে ভিন্ন, অনন্য।

ঝিলমিলের মতো মানুষগুলো কী চায়? একটু ভালোবাসা, কারো স্নেহ, যে তাকে বুঝতে পারবে,   পাশে থাকবে। বারফি ঝিলমিলের কাছে ঠিক সেই মানুষটাই। বারফি সমাজের মানুষগুলোর মতো ঝিলমিলকে আলাদাভাবে দেখে না, তাকে নিয়ে হাসাহাসি করে না বরং তাকে হাসায়, ঝিলমিল ভয় পেলে তার ছায়া হয়ে পাশে থাকে।

গল্পের আরেকটি চরিত্র শ্রুতিই আমাদের সামনে গল্পটি তুলে ধরে এবং আমাদের ভাবায়। শ্রুতির মতে, বারফি অপূর্ণ হলেও তার ভালোবাসা ছিল পূর্ণ। বারফির প্রতিও তার ভালোবাসার কমতি ছিল না। তবে সমাজের কথা ভেবে, নিজের ভবিষ্যৎ এর কথা ভেবে সে দুই কদম পিছিয়ে যায়। শ্রুতির ভালোবাসার ক্ষমতা ছিল কিন্তু পাশে থাকার সাহস ছিল না। একসময় সমাজের পরোয়া না করে যখন সে ছুটে আসে তখন আর সময় তার পাশে থাকে না। ভুলের পরিণাম স্বরূপ সে হারায় তার বারফিকে, নিজের কথা না ভেবে কাছে নিয়ে আসে দুজন অপূর্ণ মানুষকে এবং এই দুজন অপূর্ণ মানুষই একে অপরকে ভালোবাসায় পূর্ণ করে। সিনেমার শেষ অংশে তাদের প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে সুন্দর জীবনযাপন করা দেখে দর্শকের মনেও একধরনের ভালোলাগার তৈরি হয়।

নীরবতাও ভালোবাসারই প্রকাশ। কাউকে বুঝতে হলে শব্দ কি খুব জরুরি? না, মানসিক এবং শারীরিক প্রতিবন্ধকতাসহ দুজন মানুষের এই নির্ভেজাল গল্প আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে একটু হলেও প্রভাবিত করে। তাই বারফি মুভিটা সিনেমাপ্রেমীদের মনে সবসময় আলাদা একটি স্থান নিয়ে রাখবে।

Leave a Comment

Skip to content