জাপানিজ এনিম জগতের একটি সাড়া জাগানো চলচ্চিত্র Koe no katachi যা সকলের কাছে পরিচিত আ সাইলেন্ট ভয়েজ কিংবা দ্যা শেইপ অফ ভয়েজ নামে। শারীরিক অক্ষমতা, বুলিং, হতাশা এবং বন্ধুত্বের গল্পবুনন সকলের অনুভূতির জগতকে নাড়া দিয়ে যায়।
এলিমেন্টারি(প্রাথমিক) বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইশিদার ক্লাসে একদিন নতুন সহপাঠী হিসেবে আসে নিশিমিয়া। ক্লাসে প্রবেশ করা মাত্রই নিশিমিয়া যখন তার পরিচয় দেয় তখনই সবাই বুঝে যায় যে সে বাকি সবার চেয়ে আলাদা। কারণ, সে তার পরিচিতি দিতে কোনো শব্দ উচ্চারণ করে না বরং ব্যাগ থেকে বের করে একটি ছোট নোটখাতা। যেখানে সে লিখে দেয় সে শুনতে পারে না এবং সে এই নোটখাতার মাধ্যমেই সকলের বন্ধু হতে চায়। স্বভাবতই শিক্ষার্থীদের মাঝে দেখা যায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
দেখা যায়,নিশিমিয়া নোটবুকে লিখে লিখে সবার সাথে কথা বলছে। পড়াও বুঝে নিচ্ছে লিখিতভাবেই। এছাড়াও নিশিমিয়া যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে সাইন ল্যাংগুয়েজ। হাত দিয়ে বিভিন্ন সাইন দিয়ে সে মনের কথা প্রকাশ করে। শোনার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে হিয়ারিং এইড। আধো আধো বুলি দিয়ে সে কথা বলারও চেষ্টা করে কিন্তু তা কারো বোধগম্য হয় না।
প্রথমদিকে নিশিমিয়া প্রতি সবার বন্ধুসুলভ আচরণ দেখা গেলেও তা সময়ের সাথে সাথে পরিণত হতে থাকে বিরক্তিতে। সে হয়ে উঠে সকলের হাসির পাত্র। ইশিদা এবং তার বন্ধুরা মিলে বুলিং শুরু করে নিশিমিয়াকে। তার আধো আধো শব্দ নিয়ে হাসাহাসি, কান থেকে হিয়ারিং এইড খুলে ফেলে দেয়া এমনকি তার নোটবুকটাকেও পানিতে ফেলা দেয়া হয়। হাসিখুশি, সবার সাথে মিশতে চাওয়া মেয়েটাকে মুহূর্তেই গ্রাস করে চরম একাকীত্ব।
সমাজের একটি করুণ চিত্রই যেন ফুটে উঠে চলচ্চিত্রটিতে। কীভাবে শারীরিকভাবে অক্ষম একজন মানুষ তার সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করে খাপ খাইয়ে নেয়ার, কীভাবে অন্যের দুর্ব্যবহার এর জন্যও দোষারোপ করে নিজেকে, এমনকি একটা সময় নিজেকেই ঘৃণা করতে শুরু করে- রূপালি পর্দায় এসবই নিশিমিয়া নামের চরিত্রটির মাধ্যমে ফুটে উঠে।
ইশিদা ও তার বন্ধুদের আচরণ যেন সমাজের বিবেকহীনতারই প্রতীক। একটা ছোট কথাও যে কতটা মানসিক ক্ষত তৈরি করে, পরিণতি যে কতটা নির্মম হতে পারে তাই মানুষ বুঝতে পারে না। তবে এই চলচ্চিত্রে যা খুবই সুন্দর করে দেখানো হয়েছে তা হলো ইশিদা ও তাদের বন্ধুদের নিজেদের ভুল স্বীকার করে তা শোধরানোর চেষ্টা। ইশিদা তার কর্মফলের প্রায়শ্চিত্ত করতে কোনো পথ বাকি রাখে নি। এছাড়াও, চলচ্চিত্রে সাইন ল্যাংগুয়েজ নিয়ে শিক্ষকদের আলাদা ক্লাস নেয়ার উদ্যোগ, সাইন ল্যাংগুয়েজ ক্লাবের কথা উল্লেখ এবং বুলিং এর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ সত্যিই প্রশংসনীয়।
কোনো মানুষই পরিপূর্ণ না। হয়তো কেউ শারীরিকভাবে, কেউ মানসিক ভাবে। সকলেই নিজের এই অপূর্ণতাগুলোকে কাটিয়ে উঠতে চায়। তাই এই অপূর্ণতাগুলোকে মেনে নিয়ে একে অপরকে সহযোগিতা করাটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার। নিশিমিয়া এবং ইশিদার গল্প যেন তাই ই প্রকাশ করে।
“Back then, if we could have heard each other’s voices, everything would have been so much better.” – Shouya Ishida