খুব প্রিয় একটা কাজের কথা বলতে গেলেই মাথায় আসে শৈশবের স্মৃতি রোমন্থন। মাঝে মাঝে স্মৃতি গুলো হাসায়, মাঝে মাঝে হয় মন খারাপের কারণ। তবুও শৈশবের পাতা জুড়ে বিচরণ করা অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঠিক এমনই একটা স্মৃতি আমার হাতেখড়ির গল্প।

কখন শুরু এই হাতেখড়ি? সত্যি বলতে তা তোহ আমার নিজেরই জানা নেই। কত ছিল বয়স? দুই? তিন নাকি চার? মা বাবার মুখে শোনা আমি নাকি বই পড়তাম আর জানালা দিয়ে তা ফেলে দিতাম। শুনে কেবল হাসিই পায় যে ওমা, নিজেকে কি ফজলুল হক ভাবতাম নাকি! আবার স্বাভাবিকভাবেই বইপড়ুয়া এই আমির সাথে সেই ছোট্ট আমিকে মেলাতে পারি না। তবে হ্যাঁ, বই এর প্রতি নেশাটা সেই ছোটবেলা থেকেই। যেখানেই বই পেতাম তা খুলে বসে থাকতাম। কেজানে কী বুঝতাম, নাকি বুঝতামও না। পড়তে শেখা কি তখনও হয়েছিল??

মনে আছে, পড়তে বসতে সবসময় খুব বিরক্ত লাগতো। পার্ক থেকে শখ করে কিনে নিয়ে আসা অক্ষরের বই ই যে আয়ত্ত করা লাগবে তা কীভাবে জানতাম। কিন্তু মা, তিনি তোহ হাল ছাড়বার মানুষ নন। সন্ধ্যা হলেই বই খুলে “অঅঅ, অ তে অজগর…আআআ, আ তে আম” টান দিয়ে দিয়ে সুর করে করে সেই না কত্ত পড়া! এরপর আসে লাইন টানা খাতা। খাতায় অ, আ, ই, ঈ, ক, খ সব লিখে দেয়া, তার উপর হাত ঘুরিয়ে লেখতে শেখা। সবার আগে লেখতে শেখা শব্দ হয়তো মা ই ছিল, এরপর নিজের নাম, বাবা। কিছুদিনের মধ্যেই সবজায়গায় নিজের নাম, বাবা-মা এসব শব্দের অস্তিত্ব পাওয়া গেল। বাদ রইল না কোনো খাতা, ডায়েরি, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এমনকি দেয়াল। এখনও ভাঙা ভাঙা হাতের লেখা সহ সেই সব চোখে পড়লেই মনটা ভালো হয়ে যায়।

ধীরে ধীরে বাড়তে থাকলো শব্দের ভান্ডার। অ তে অজগর থেকে পড়া শুরু হল অ তে অজগর আসছে তেড়ে…আ তে আমটি খাব পেড়ে। বাংলার সাথে সাথে ততদিনে এক দুই তিন ও শেখা হল। সুর করে এ বি সি ডি ই এফ জিইইইই, এইচ আই জে কে এলোমেনোপি গাইতে গাইতে ইংরেজিটাও শেখা শুরু। নতুন নতুন শব্দও শেখা হয় আর যা ই শেখা হয় না কেন সব কোথাও না কোথাও লেখাও হয়ে যায়।

এরপর একটা সময়ে মনে জায়গা করে নেয় ভূতের গল্পের বই, ঈশপের গল্প, ঠাকুমার ঝুলি। একটা একটা করে শব্দ পড়ে পড়ে, মা বাবার কাছ থেকে শুনে শুনে চলে গল্পটাকেও আয়ত্ত করা। এভাবেই অনেকটুকু লেখা শেখা, লেখতে পারা শেখা। বাক্য লেখা শুরু হল, কবিতা পড়া শুরু হলো।

শুরুতে বি, ডি এর পার্থক্য ধরতেই পারতাম না। বি এর জায়গায় ডি, ডি এর জায়গায় বি লিখে দেয়া ছিল প্রতিদিনকার কাজ। আর ঋ!! ওরেহ বাবা, ঋ বোধগম্যই হতো না। এরপর অনেক চেষ্টার পর এগুলাও চলে আসে আয়ত্তে। জলদি শেখার পিছনে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছিল পাশে থাকা ছবিগুলো। একে তোহ ছবি দেখতে ভালো লাগতো, আগ্রহ জাগতো। আবার ছবি দেখে কী সহজেই না শব্দটাও চিনে ফেলা যেত। বড় হয়ে এখন বুঝি যে এজন্যই ছোটদের বইয়ে ছবি থাকে। আসলে শেখার সাথে দেখা, শোনারও যে কত বড় অবদান তা বলে শেষ করা যাবে না।

এরপর কিন্ডারগার্টেন, নার্সারি পেরিয়ে স্কুল-কলেজ আর এখন বিশ্ববিদ্যালয়। সেই ছোটবেলায় শেখা  শব্দ গুলো আজ হাজার শব্দের লেখালেখিতে স্থান করে নেয়। প্রতিটা শব্দ শেখার পিছনে কত কাহিনী, কত চেষ্টা। আর আজ মুহূর্তেই লেখা হয়ে যায় এমন কত রচনা। বেড়েছে শব্দ ভান্ডার, শিখছি, লিখছি কত কিছু। তাও সেই প্রথম শেখার মুহূর্ত গুলো অতুলনীয়, তারা স্মৃতি তেই বেঁচে থাকবে চিরকাল।

Leave a Comment

Skip to content