অটিজম এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে সাহায্য করা

জীবনের এক অপরিহার্য বাস্তবতা হলাে পরিবর্তন। দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে নতুনত্ব আনার মতাে ছােট কোনো পরিবর্তন থেকে শুরু করে কোনো নতুন জায়গা বা শহরে যাওয়ার মতো পরিবর্তন- জীবনের কোনাে না কোনো ক্ষেত্রে আমাদের বিভিন্ন বৈচিত্র্য বা পরিবর্তনের সম্মুখীন হতে হয়। কিন্ত অটিজম স্পেকট্রামে ভোগা শিশুরা জীবনের কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন বা বৈচিত্র্যর সাথে মানিয়ে নিতেও প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়। সেটা হতে পারে সকালের নাস্তার ভিন্নতা থেকে শুরু করে পুরোদস্তুর কোনো প্রেক্ষাপট পরিবর্তন। তাই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের শিক্ষক, বাবা-মা কিংবা সাহায্যকারীরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে থাকেন যেকো্নো নতুনত্ব, যা শিশুটিকে উদ্বিগ্ন কিংবা বিষণ্ণ করে ফেলতে পারে,  তা পরিহার করার। প্রাথমিক-ভাবে এমনটাই করনীয় মনে হলেও আসুন বাস্তবতাটা দেখি যেকোনো কিছু ধ্রুব, কিংবা অপরিবর্তনীয় ধরে নেয়াটা আসলে অবাস্তব। পরিকল্পনা বদলায়, নতুনত্ব আসে। নতুন দিন আসে নতুন আলো, নতুন আবহাওয়া নিয়ে। পৃথিবীতে কোনো কিছুই ধ্রুব নয়। তাই, যেকোনো বৈচিত্র্য বা পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নেয়া অপরিহার্য বিষয়। কিন্তু এমনটা কি করে সম্ভব?

চলুন জেনে নেই . . .

প্রত্যাশিত কোনো পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নেয়া
ধরুন, আপনার শিশুর সহপাঠীরা মিলে একদিন শিক্ষা সফরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। কিংবা শিশুকে তার শুশ্রূষাকারীর কাছে রেখে আপনি বন্ধুর সাথে কোথাও বের হবেন। অথবা সামনে হয়তো শিশুর কোনো ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে। পরিস্থিতি যেমনই হােক না কেন, প্রাত্যহিক রুটিনের এরূপ পূর্বপরিল্পিত পরিবর্তনের চাপ কমানাের কিছু উপায় আছে।
  • পূর্বপরিল্পিত পরিবর্তনগুলো রুটিন কিংবা ক্যালেন্ডারে অন্তর্ভুক্ত করুন। গুরুত্বপর্ণ কোনো আয়োজন, কিংবা দিনগুলো ক্যালেন্ডার বা রুটিনে বক্স করে রাখুন যেনো সহজেই চোখে পড়ে। এরপর আপনার সন্তানকে বলুন নিয়মিত সেই ক্যালেন্ডারে চোখ রাখতে, যেনো আসন্ন কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা সম্পর্কে সে আগে থেকেই অবগত থাকতে পারে। এ সম্পর্কিত শিশুর কোনো প্রশ্ন থাকলে তো ক্যালেন্ডারেই উল্লেখ করুন।
  • ঘটনার কিছুদিন আগে (শিশুর যে কয়দিন সময় প্রয়োজন বলে মনে হয়) আসন্ন ঘটনাটি কেমন হতে যাচ্ছে, তা নিজের মত করে, নিজেকে ওই অবস্থায় দাঁড় করিয়ে শিশুর সামনে উপস্থাপন করুন। এতে করে ঘটনাটি সম্পর্কে শিশু একটি স্বচ্ছ ধারণা পাবে। প্রয়োজনে ছবির মাধ্যমেও তা উপস্থাপন করা যেতে পারে।
  • আসন্ন পরিবর্তন বা ঘটনাটি যদি অপরিচিত কোনো জায়গায় হয়ে থাকে, তবে আগে থেকেই ওই জায়গাটি সম্পর্কে খোঁজ নিন। জায়গাটি সম্পর্কে শিশু আগে থেকে ধারণা পেলে সে প্রেক্ষাপটটি অনুমান করে নিতে পারবে। এতে করে, নতুন ঘটনাটি তার কাছে সহজে গ্রহণযোগ্যতা পাবে, যা তাৎক্ষণিক উদ্বেগ বা অবসাদ থেকে অনেকাংশেই মুক্তি দিবে। অনুরূপভাবে, শিশুর কোনো নতুন শিক্ষক বা সাহায্যকারীর সাথেও আগে পরিচয় করিয়ে তাদের সাথে কিছু সময় কাটানোর ব্যাবস্থা করে দিতে পারেন। যেনো হুট করে তাদের দেখে শিশু সংকোচবোধ না করে। আর যদি দেখা করানোর সুযোগ না থাকে, তবে অন্তত তাদের ছবি দেখিয়ে রাখুন।
অপ্রত্যাশিত কোনো পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নেয়া
জীবন প্রবাহমান। কোনো আনন্দযাত্রায় বিড়ম্বনা দেখা দিতে পারে। শিশুর শিক্ষক হঠাৎ অসুস্থ হলে তার পরিবর্তে নতুন শিক্ষকের প্রয়োজন হতে পারে। জীবনে এমন অনেক অপরিকল্পিত ঘটনাই ঘটে যায়, যা সত্বেও সব মানিয়েই চলতে হয়। শিশুকে এমন অপ্রত্যাশিত কোনো পরিবর্তন বা বৈচিত্র্যর সাথে অভ্যস্ত করার একটি কার্যকর উপায় হলো এই পরিবর্তনগুলোর সাথে তাদের সরাসরি পরিচয় করিয়ে দেয়া। খুবই সাধারণ, ছোট কোনো ব্যাপার থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে বড় কোনো পরিবর্তনের দিকে আগানো যেতে পারে। যেমন, যেকোন সারপ্রাইজ, কিংবা কোনো আয়োজনের মাধ্যমে তাদের সামনে আকস্মিক পরিবর্তনের ইতিবাচক দিকটি তুলে ধরার চেষ্টা করুন। অবশ্যই নেতিবাচক পরিবর্তন সম্পর্কেও ধীরে ধীরে ধারণা দেয়া উচিত, তবে তা হতে হবে নিরাপদ এবং খুবই নগণ্য। হাল না ছেড়ে এগিয়ে যেতে হবে ধৈর্য ও উদ্যমের সাথে। শিশুকে অপ্রত্যাশিত পরিবর্তনগুলোর সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার কিছু উপায় তুলে ধরা হলো:
  • শিশুর ডেইলি রুটিনে আকর্ষণীয় চিত্রের সাথে একটি “?” যুক্ত কার্ড অন্তর্ভুক্ত করুন। যাতে করে, শিশু প্রতিদিন অজানা কিংবা নতুন কিছুর সাথে পরিচিত হতে আগ্রহী হয়ে উঠে এবং আনন্দের সাথে কোনো নতুনত্বকে গ্রহণ করতে পারে।
  • শিশুকে আকস্মিক কোনো পরিবর্তন গ্রহণ করার জন্য পর্যাপ্ত সময় দিন। কোনো ব্যস্ত বা কর্মমুখর দিনে নয়, বরং, অবসর বা ছুটির দিনে তার সামনে পরিবর্তনটি তুলে ধরুন। যেনো সে পরিবর্তনটি গ্রহণ করার জন্য পর্যাপ্ত সময় পায়।
  • আকস্মিক পরিবর্তনটি শিশুর সাথে আপনাকেও চমৎকৃত করুক বা না করুক, তাৎক্ষণিক অবসাদ বা দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে শিশুর সাথে কিছু মানসিক অনুশীলন করতে পারেন। সেটা হতে পারে কিছুক্ষণের জন্য অন্য কোনো ব্যাপারে গল্প করা, নিজের সাথে কথা বলা, কিংবা কোনো ব্রিদিং এক্সারসাইজ (শ্বাস অনুশীলন – yoga, meditation ইত্যাদি)। এতে করে পরিবর্তনের আকস্মিকতা ছাপিয়ে সাময়িক প্রশান্তি লাভ করা যাবে, যা পরিবর্তনটিকে ধীরে ধীরে একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হতে সাহায্য করবে।
  • আকস্মিক পরিবর্তনটিকে শিশুর সামনে যথাসম্ভব সহজ এবং নমনীয় করে তুলুন। উদাহরণস্বরূপ, কোথাও যাওয়ার সময় রাস্তা বন্ধ বা কাটা থাকলে বিকল্প রাস্তা নির্বাচনের মত স্বাভাবিক, কিন্তু অপ্রত্যাশিত পরিবর্তনটি শিশুর কাছে স্বাভাবিক করে তুলুন।
  • পরিবর্তনের ফলে শিশুর প্রতিক্রিয়ায় আপনি নিজে আশাহত হবেন না। এতে করে অবস্থা অবনতির দিকে যেতে পারে। বরং, ধীর- স্থির, শান্ত থেকে শিশুর পাশে থাকুন। তাকে আশ্বাস দিন যে, পরিবর্তনটি মেনে নেয়া কঠিন হলেও আপনি তার সাথে আছেন। আর হ্যাঁ, শিশু পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে গেলে তার প্রশংসা করতে ভুলবেন না। এতে করে সে উৎসাহ পাবে। প্রয়োজনে ছোট কোনো উপহারের ব্যবস্থাও করতে পারেন।
আপনার শিশু পরিবর্তনের ব্যাপারটি পছন্দ না- ই করতে পারে। এটা খুবই স্বাভাবিক। আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই এমন অনেক ব্যাপার আছে যা আমরা পছন্দ করিনা। কিন্তু,ইতিবাচক বা নেতিবাচক- যেকোনো পরিবর্তনের সাথেই শিশুকে খাপ খাইয়ে নেয়া বা মানিয়ে নেয়া শিখতে হবে। কেউই কখনো কোনো সুরক্ষা বলয়ের ভিতর জীবন কাটাতে পারে না। তাই শিশুর সুস্থ, সুন্দর, স্বাধীন ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে এমন জীবনমুখী ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করার বিকল্প কিছু নেই। প্রতিটি শিশুর ভবিষ্যৎ হোক সুস্থ, সুন্দর এবং আনন্দময়।
লেখাটি B. A. Stout এর লেখা এবং The Autism Site ব্লগে  How to Help a Child on the Spectrum Learn to Cope with Change শিরোনামে প্রকাশিত লেখার বাংলা ভাষান্তর।

Leave a Comment

Skip to content