এক নজরে অটিজমের ইতিহাস

উনিশ শতকের প্রথম দশকে (১৯০৮ সালে) অটিজম শব্দটি যখন প্রথমবার ব্যবহার হয়। তখন থেকে বর্তমান পর্যন্ত চিকিৎসক এবং গবেষকেরা অনেক দূর এগিয়ে এসেছেন। আপনি অটিজমকে একটি নতুন বিষয় ভাবতে পারেন কেননা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি একটি সামাজিক আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে।  কিন্তু ৭০ বছরের বেশি সময় ধরে একাডেমিয়াতে এর আলোচনা চলছে এবং এইসময়ে এর অবস্থা সম্পর্কে আমাদের চিন্তাভাবনা, সচেতনতা নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। অটিজমের ইতিহাসে ঘটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো এখানে সময়ের সমান্তরালে উল্লেখ করা যাচ্ছে :

১৯০৮
অটিজম শব্দটি বিশেষভাবে চিহ্নিত ও আত্নমগ্ন সিজোফ্রেনিক রোগীদের একটি ধরণ বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়েছে। 

১৯৪৩
আমেরিকান শিশু মনোবিজ্ঞানী লিও ক্যানার.এম.ডি.  ১১টি শিশু দেখেন যারা অত্যন্ত বুদ্ধিমান ছিলো কিন্তু “একাকিত্বের জন্য তীব্র আকাংক্ষা” এবং “একইভাবে থাকার জন্য অত্যন্ত জেদ” প্রদর্শন করে, তাদেরকে বর্ণনা করে একটি গবেষণা প্রকাশ করেন এবং পরবর্তীতে তাদের এই অবস্থাকে  ” প্রাথমিক শৈশব অটিজম” নাম দিয়েছিলেন।

১৯৪৪
হ্যানস‌ আ্যাসপার্গার নামে একজন জার্মান বিজ্ঞানী অটিজমের একটি তুলনামূলক মৃদু অবস্থাকে বর্ণনা করেন যা বর্তমানে ” আ্যাসপার্গার’স সিনড্রোম” নামে পরিচিত । তিনি যে কেসগুলোর প্রতিবেদন করেছিলেন সেগুলোতে সে সমস্ত ছেলেদের বর্ণনা করা হয় যারা অত্যন্ত বুদ্ধিমান হওয়ার সত্ত্বেও সামাজিক মিথস্ক্রিয়া এবং নির্দিষ্ট আগ্রহ নিয়ে জেদ করার সমস্যা প্রদর্শন করে। 

১৯৬৭
মনোবিজ্ঞানী ব্রুনো বেটেলহাইম “রেফ্রিজারেটর মাদারস”, এই তত্ত্ব জনপ্রিয় করেছিলেন কেননা তার ধারনা ছিল মায়েদের যথেষ্ট আদর, স্নেহ ও মমতা না পেয়ে শিশুরা অটিজমের শিকার হয়। (সতর্কতা : এটি সম্পূর্ন মিথ্যা।) প্যারেনটস উপদেষ্টা, ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অফ মেডিসিনের চাইল্ড স্টাডি সেন্টারের পরিচালক এবং অটিজম এন্ড ডেভেলপমেন্ট ডিসঅর্ডারস জার্নালের সম্পাদক-ইন-চিফ ফ্রেড ভলকমার এম.ডি. ব্যাখ্যা করেন, “ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে অটিজম নিয়ে অনেক মনোবিশ্লেষিত কাজ হয়েছিল যেখানে গবেষকরা জীবনের অভিজ্ঞতাগুলোর প্রভাবকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখতেন“।

অটিজমকে আন্তর্জাতিক স্ট্যাটিসটিকাল ক্লাসিফিকেশন অব ডিজিস এন্ড রিলেটেড হেলথ প্রবলেমস  সিজোফ্রেনিয়ার অধীনে বিবেচনা করেছেন যদিও বিজ্ঞানীরা এখন জানেন যে শর্তগুলোর মধ্যে কোনো যোগসূত্র নেই।

জীববিজ্ঞান বা জেনেটিক্সের ভূমিকা তারা বিবেচনা করেননি যা বর্তমানে আমাদের কাছে অটিজমের প্রধান কারণ।” 

১৯৭৭
যমজদের উপর গবেষণায় দেখা গেছে অটিজম মূলত মস্তিষ্ক বিকাশের জেনেটিক্স ও বায়োলজিকাল ত্রুটির ফলাফল। 

১৯৮০
” ইনফ্যানটাইল অটিজম ” প্রথমবারের মতো ডায়াগনস্টিক এন্ড স্ট্যাটিসটিকাল ম্যানুয়াল অব মেনটাল ডিসঅডারস (ডিএসএম) এ তালিকাভুক্ত করা হয় এবং এই সমস্যাটি বর্তমানে শৈশব সিজোফ্রেনিয়া থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পৃথক।

১৯৮৭
ডিএসএম “ইনফ্যানটাইল অটিজম”কে আরও ব্যাপক সংজ্ঞার সাথে “অটিজম ডিসঅর্ডারস” এ প্রতিস্থাপন করে। ইউসিএলএ মনোবিজ্ঞানী ইভার লভকাস তার পিএইচডি গবেষণায় দেখান কীভাবে নিবিড় আচরন অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের মা-বাবাদের  নতুন আশা দিতে পারে। 

১৯৮৮
রেইন ম্যান চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়। এটি ডাস্টিন হফম্যানকে অটিস্টিক পন্ডিত হিসেবে পরিচিতি দেয়, যার মধ্যে ফটোগ্রাফিক ও বিশাল সংখ্যা গণনা করার জ্ঞান ও প্রতিভা রয়েছে । ড.ভলকমার নোট করেন,” এটি এই ব্যাধি সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।” যদিও অটিজমে আক্রান্ত সকল শিশুর এই দক্ষতা নেই। 

১৯৯১
আমেরিকান ফেডারাল সরকার অটিজমকে একটি বিশেষ শিক্ষার যোগ্য অবস্থা হিসেবে বিবেচনা করে। সরকারী স্কুলগুলো অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের চিহ্নিত করতে এবং বিশেষ সেবা দিতে শুরু করে ।

১৯৯৪
আ্যসপার্গার’স সিনড্রোমকে ডিএসএম-এ অন্তর্ভুক্ত করা হয় যেন অটিজম স্পেকট্রামে তুলনামূলক মৃদুঅবস্থায় অন্তর্ভুক্ত মানুষরা আরও উচ্চতর মনোবৃত্তির কাজ করতে পারে ।

১৯৯৮
দ্যা ল্যানসেট এ প্রকাশিত হওয়া এক গবেষনা, মিসেলস-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর)-এর ভ্যাক্সিন কে অটিজম এর কারণ হিসেবে শনাক্ত  করে।কিন্তু এই ধারণাটি দ্রুত নাকোচ করে দেওয়া হয়েছিল। 

২০০০
টিকা প্রস্তুতকারীরা থিমেরসাল ( একটি পারদ ভিত্তিক সংরক্ষণকারী) কে অটিজমের কারণ হিসেবে এর ভূমিকা সম্পর্কে জনগনের ভয়ের কারনে নিয়মিতভাবে দেওয়া সকল শৈশবকালিন ভ্যাক্সিন থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, যদিও পরবর্তীতে ভ্যাক্সিন এই ধারণাটিকেও ভুল বলে প্রমাণ করা হয়। 

২০০৯
ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিস কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন, (সিডিসি) অনুমান করেছে যে ১১০ টির মধ্যে ১  টি শিশুর অটিজম স্পেকটার্ম ডিসঅর্ডারস রয়েছে, ২০০৭ সালের গননায় যা ১৫০ জনে একজন শিশুর ছিল, যদিও উন্নত স্ক্রিনিং ও ডায়াগনস্টিক কৌশল এর আওতায় সিডিসি বলেছে এই বৃদ্ধি কমপক্ষে খুব কম অংশের মধ্যে বেড়েছে। 

২০১৩
DSM-5 এই অবস্থার সমস্ত উপশ্রেণি কে অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (এএসডি) এর আওতায় বিভাগ করে। এস্পার্গারস সিন্ড্রোম আর পৃথকভাবে বিবেচনা করা হয় না। এএসডি দুটি বিভাগ দ্বারা সংজ্ঞায়িত :
১- সামাজিক যোগাযোগ বা মিথস্ক্রিয়ার সীমাবদ্ধতা।
২-সীমাবদ্ধ বা পুনরাবৃত্তি-মূলক আচরণ।  

এই লেখাটি শুধুমাত্র জনসচেতনতার উদ্দেশ্যে Parents.com এ A Timeline Of The History Of Autism Spectrum Disorder নামে প্রকাশিত লেখাটির বাংলা সংস্করণ করে প্রকাশ করা যাচ্ছে।

Leave a Comment

Skip to content