আটিজম এবং কতিপয় গুজব

আপনারা হয়তো ইতোমধ্যে অটিজম সম্পর্কে অনেকরকম ধারনা পেয়েছেন। কিন্তু আমরা এটা নিশ্চিত করতে চাই যে আসলে কোনগুলো সত্য আর কোনগুলো মিথ্যা। তাই আমরা আজ অটিজম সম্পর্কিত দশটি গুজব নিয়ে কথা বলবো যেন এতে করে আমাদের কিছু ভুল ধারনা কেটে যায়।সবগুলোই শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ যা শিক্ষার্থীদের তাদের সহপাঠীদের সাথেও শেয়ার করা উচিত। এখন আসুন গুজবগুলো নিয়ে বলি-

গুজব-১: যারা অটিজমে আক্রান্ত তারা বন্ধুত্বের সম্পর্কে জড়াতে চায় না।

কিন্তু আসলে বিষয়টি এমন নয়। যদি আপনাদের ক্লাসে কেউ অটিজমে আক্রান্ত থাকে তবে দেখবেন সামাজিকীকরণে তাদের নানান অক্ষমতা থেকে যায়, যার জন্যে তারা তাদের সমবয়সীদের সাথে ঠিকভাবে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারেনা। তাদের কিছুটা লজ্জাবোধ করতে দেখা যায়। এর কারন হয়তোবা সমাজের অন্য স্বাভাবিক ছেলে-মেয়েরা যেভাবে সম্পর্কগুলো দেখে তারা সেভাবে দেখতে সক্ষম হয়না অথবা তাদের যোগাযোগ ভারসাম্যহীনতা।

গুজব-২: যারা অটিজমে আক্রান্ত তারা সুখ,দুঃখ,আবেগ কিছুই অনুভব করতে পারেনা।

এ ধারনাটাও সত্য নয়। অটিজম কখনও কারও সুখ-দুঃখের অনুভূতিগুলোতে কোনোপ্রকার বাঁধা প্রদান করেনা বরং এধরনের ব্যক্তিরা তাদের আবেগ,সুখানুভুতি,দুঃখ-কষ্ট ভিন্ন উপায়ে উপলব্ধি করে।

গুজব-৩: যারা অটিজমে আক্রান্ত তারা অন্যের আবেগ বা অনুভূতিকে বোঝতে পারেনা।

এক্ষেত্রে বলা যায় যে,অটিজমে আক্রান্তরা মাঝে মাঝে একে অপরের মধ্যে অব্যক্ত যোগাযোগগুলো বুঝতে সক্ষম হয়না এবং কারো কারো সাংকেতিক ভাষা কিংবা ব্যঙ্গাত্মক প্রতিক্রিয়াও বুঝতে পারেনা ঠিকই কিন্তু যখন সরাসরি কোনো অনুভূতির শেয়ার হয় তখন তারা সেটা ভাল বুঝতে পারে এবং অন্যদের চেয়েও ভাল সহানুভূতি বা সমবেদনা প্রকাশ করতে দেখা যায়।

গুজব-৪: যারা অটিজমে আক্রান্ত তারা বুদ্ধিমত্তা এবং সৃজনশীলতার দিক দিয়ে অক্ষম।

এক্ষেত্রে আমরা প্রায় সময়ই দেখে থাকি অটিজমে আক্রান্তরা বরং কিছু বিশেষ সক্ষমতা সাথে নিয়ে আসে এবং এদের কারো কারো অনেক ভাল আইকিউ থাকে যা অন্য আরো অনেক স্বাভাবিকদের চেয়েও বেশি। সঙ্গীত কিংবা গানিতিক হিসাব-নিকাশেও বিশেষ দক্ষতা পরিলক্ষিত হয়।

গুজব-৫: অটিজমে আক্রান্তরা যেন ‘Rain man’ মুভির Dustin Hoffman এর চরিত্রের ন্যায়।

এখানে বলা যায়, অটিজম হচ্ছে একটা ‘বর্নালী বৈকল্য'(Spectrum Disorder) এবং এটি একেকজনের কাছে একেকভাবে পরিবর্তিত হয়। একজন অটিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিকে জানা মানে একজনকেই জানা। একজনের সক্ষমতা বা সীমাবদ্ধতা কখনও অন্যকারো সক্ষমতা বা সীমাবদ্ধতাকে নির্দেশ করবেনা।

গুজব-৬: অটিজমে আক্রান্তদের যেসব গুনাবলী দেখা যায় তা সাধারনত অদ্ভুতধরনের হয়ে থাকে।

অটিজম এক ধরনের শারীরিক অবস্থা যা মস্তিষ্কের উন্নয়নকে প্রভাবিত করে এবং এটা কারো কারো জন্যে একটা জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া হয়ে দাড়ায়।

গুজব-৭: অটিজমে কেবল বাচ্চারা আক্রান্ত হয়ে থাকে।

সত্যি বলতে যারা শৈশবে অটিজমে আক্রান্ত থাকে তারা এই অটিজমকে নিয়েই প্রাপ্তবয়স্ক হয়।এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া।

গুজব-৮: অটিজম কেবলই একটি মস্তিষ্কের ব্যাধি।

এক্ষেত্রে গবেষনায় জানা গেছে যে অনেকেই অটিজমের সাথে সাথে মৃগীরোগ, অন্ত্রের সমস্যা, খাদ্য সংবেদনশীলতা কিংবা এলার্জিজনিত রোগসমূহে আক্রান্ত থাকে।

গুজব-৯: অটিজমে আক্রান্ত হওয়ার পেছনে বাবা-মায়ের অসচেতনতা দায়ী।

আমরা দেখতে পাই, ১৯৫০ সালে “Refrigerator mother hypothesis’ নামে একটি থিওরিতে বলা হয়েছিল যে অটিজমের অন্যতম কারন হচ্ছে মায়ের মানসিক উদ্দীপনার ঘাটতি।কিন্তু এখনও পর্যন্ত উক্ত থিওরিটি প্রমানিত হয়নি।

গুজব-১০: অটিজমে আক্রান্তদের সংখ্যা সর্বশেষ ৪০ বছর যাবৎ ব্যপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আমরা যদি দেখি সর্বশেষ ২০ বছরে প্রায় ৬০০% হারে অটিজমের ব্যপকতা পরিলক্ষিত হয়েছে। ১৯৭৫ সালে যেখানে ১৫০০ জনে ১জন অটিজমে আক্রান্ত পাওয়া যেত, ২০১৪ সালে এসে দাড়িয়েছে ৫৯ জনে ১ জন।


লেখাটি Autism Speaks ব্লগের নিজস্ব সম্পত্তি। এটিকে অটিজম সম্পর্কিত জ্ঞান এবং সচেতনতা সৃষ্টির স্বার্থে মূলব্লগের অনুমতিক্রমে বাংলা অনুবাদ করা হয়েছে।

Leave a Comment

Skip to content