কিংবদন্তিকে জানুন: নিক ভায়োচিচ

নিকোলাস জেমস ভায়োচিচ সংক্ষেপে নিক ভায়োচিচ। এই গুণী মানুষটির জন্ম ১৯৮২ সালের ৪ ডিসেম্বর। জন্মসূত্রে তিনি আমেরিকার নাগরিক। যদি প্রতিবন্ধকতাকে পায়ে ঠেলে এগিয়ে যাওয়ার কোনো উদাহরণ দিতে হয়, তার নাম সবার আগে আসবে। নিকের জন্ম হয়েছিলো টেট্রা এমেলিয়া সিনড্রোম নামের একটি বিরল রোগ নিয়ে। এই রোগে ছোট থেকেই তিনি ছিলেন হাত এবং পা বিহীন। অক্ষমতার এর চেয়ে করূণ উদাহরণ বোধহয় আর নেই। অথচ তিনি এই অক্ষমতার ঊর্ধ্বে গিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন একজন সফল প্রচারক এবং প্রেরণাদায়ী স্পিকার হিসেবে। 

নিক ও তার পরিবার

জন্মের পর তার শরীরে অপূর্ণভাবে গঠিত হওয়া অঙ্গ নিয়েই তাকে বেড়ে উঠতে হয়েছে। তার এক পায়ের আঙ্গুল একত্রিত হয়ে লেগে ছিল। একটি অপারেশনের মাধ্যমে সেই আঙ্গুলগুলো আলাদা করা সম্ভব হয়। এরপর সেই আঙ্গুল দিয়েই নিককে তার সমস্ত কাজ করতে হত। কোনো কিছু ধরা হতে শুরু করে বইয়ের পৃষ্ঠা ওলটানো, কলম ধরা সবই তিনি ওই আঙ্গুল দিয়েই করেছেন। নিক তার জীবনে প্রতিবন্ধকতাকে সামনে থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন নানাভাবে, তবে থেমে পড়েননি কখনো। আমেরিকার স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করেছেন। মানবকল্যাণে কাজ করছেন বহুদিন ধরে।      

মাত্র সতের বছর বয়সে তার মা তাকে গুরুতর প্রতিবন্ধী হয়ে খেলছেন এমন একটি মহিলা সম্পর্কে একটি সংবাদপত্রের নিবন্ধ দেখানোর পরে, তিনি তাঁর প্রার্থনা দলের সামনে বক্তব্য দেওয়া শুরু করেছিলেন। ২০০৫ সালে, নিক একটি আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা এবং মন্ত্রণালয় “লাইফ উইড লিম্বস” প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।  ২০০৭ সালে একটি ধর্মনিরপেক্ষ প্রেরণামূলক বক্তৃতা সংস্থা শুরু করেছিলেন।  

নিক “দ্য বাটারফ্লাই সার্কাস” নামক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ২০১০ এর “মেথড ফেস্ট ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল” এ উইল চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের সেরা অভিনেতা হয়েছিলেন। তিনি মানুষকে নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বই লিখেছেন। তার প্রথম বই, “লাইফ উইদআউট লিমিটস: ইন্সপারেসন অফ আ রিডিকুলাসলি গুড লাইফ,” ২০১০ সালে র‌্যান্ডম হাউস দ্বারা প্রকাশিত হয়েছিল এবং এটি ৩০ টিরও বেশি ভাষায় অনুবাদিত হয়েছে।    

Image source: Google Image

নিক মানসিক, আবেগগত এবং শারীরিকভাবে লড়াই করেছেন বাল্যকাল থেকেই। তার অক্ষমতার কারণে, শারীরিক গঠনের কারণে বাচ্চারা স্কুলে তাকে নিয়ে ঠাট্টা করতো, তিনি এসব কারণে মাত্র ১০ বছর বয়সে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন। তবু তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সকল বাঁধাকে পিছনে ফেলে। নিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে জীবন কাটাবেন। তাদের জীবনের আশা এবং অর্থ খুঁজে বের করার বিষয়ে সোচ্চার করবেন।  তিনি ৫৭ টিরও বেশি দেশ পরিদর্শন করেছেন এবং তিন হাজারেরও বেশি বক্তব্য দিয়েছেন, যার মধ্যে কয়েকটি ১১০,০০০ মানুষকে শ্রোতাদের আকর্ষণ করেছে। তিনি বিখ্যাত প্ল্যাটফর্ম টেড-এও বক্তব্য দিয়েছেন।

নিকের প্রতিজ্ঞা হলো বিশ্বকে অনুপ্রেরণা ও সজ্জিত করা যেন আমরা সকলেই প্রতিকূলতার ঊর্ধ্বে উঠে হৃদয় ও মনের প্রতিটি অক্ষমতা কাটিয়ে উঠতে পারি! নিক ভায়োচিচের দুইটি বিখ্যাত উক্তি দিয়ে শেষ করি-

 “আপনি যদি কোনো অলৌকিকতার দেখা না পান, তাহলে নিজেই অলৌকিক শক্তি হয়ে উঠুন।”

আরেকটি হলো-

“আপনি যথেষ্ট ভাল নন এমনটি ভাবা মিথ্যা।  আপনি কোন কিছুর জন্য মূল্যবান না তা ভাবা মিথ্যা।”

Leave a Comment

Skip to content