ইংরেজি ভাষার চলচ্চিত্র ফরেস্ট গাম্প দর্শকনন্দিত এবং বহুল আলোচিত। এই চলচ্চিত্রে একজন লো আই কিউ অর্থাৎ মানসিক সীমাবদ্ধতা আছে এমন মানুষের গল্প বলা হয়েছে। কিভাবে সমাজ একজন সীমাবদ্ধতা আছে এমন মানুষকে ধীরে ধীরে প্রান্তিক করে দেয় সেই ধারাবাহিক শোষণের একটি প্রতিবেদন ফরেস্ট গাম্প। চলচ্চিত্রের মূল চরিত্র ফরেস্ট কোনো স্বাভাবিক স্কুলে পড়ালেখা করতে পারেন না শুধু মাত্র তার এই প্রতিবন্ধকতার কারণে। ফরেস্টের জীবনের পরবর্তী সংগ্রাম এবং সফলতা নিয়েই চলচ্চিত্রের সমাপ্তি।
এই চলচ্চিত্রে প্রতিবন্ধকতার প্রতি সামাজিক অবিচার এবং নানা দিক তুলে ধরার পাশাপাশি এমন কিছু ভুল তথ্য প্রদান করা হয়েছে যা প্রতিবন্ধকতা আছে এমন জনগোষ্ঠী সম্পর্কে ভুল ধারণা তৈরি করে। এই চলচ্চিত্রের অন্যতম চরিত্র লেফটেন্যান্ট ড্যান যে কিনা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়ে পরবর্তীতে মাদক এবং পতিতাগমনের এর প্রতি আসক্ত হয়ে পরে – এই ব্যাপারটিতে হয়তো পরিচালক ডিপ্রেশনের গভীরতা বোঝাতে চেয়েছেন কিন্তু এটি প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর আচরণ সম্পর্কে একটি ভুল অনুবাদ মাত্র। এমনটা সত্যি নয় যে একজন প্রতিবন্ধী সামাজিক সহায়তা এবং একেসেবিলিটি পেলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন না।
এছাড়াও ফরেস্ট কে এমন ভাবে দেখানো হয় যে সে সব কিছুতে কনফিউজড। কোনো কিছুই শিখতে পারেনা যেনো তথাকথিত স্টুপিড। কিন্তু এটি সত্যি নয়, উপযুক্ত পরিবেশ এবং শিখনকৌশল নিশ্চিত করতে পারলে যেকোনো মানুষকেই শেখানো সম্ভব।
সর্বোপরি এই চলচ্চিত্রে প্রতিবন্ধকতার সাথে সামাজিক সংগ্রাম এবং নেতিবাচক দৃষ্টি যেমন ফুটে উঠেছে তেমনি প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে একটি স্কেপটিক্যাল লেন্সে বিশ্লেষণ করে পক্ষপাতদুষ্ট ন্যারেটিভ তৈরি করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ বৈকল্য (Communication Disorders) বিভাগের সম্মান শ্রেণীতে পাঠগ্রহন চলছে। প্রতিবন্ধকতা, সীমাবদ্ধতা, যোগাযোগ বৈকল্য বিষয়ক তাত্ত্বিক এবং প্রায়োগিক দিক নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করছি। উদ্ভাবনী গবেষণামূলক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সামাজিক পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণ থেকে চিন্তাকে ভাষায় রূপ দেয়ার চেষ্টায় নিয়োজিত।