যুগ যুগ ধরে যোগাযোগ আর বিনোদনের এক অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে সঙ্গীত। সঙ্গীত এমনই এক মাধ্যম যা কয়েক মিনিটের মধ্যেই একজন মানুষকে হাজারো আবেগের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে পারে। সঙ্গীত শব্দটি শুনলেই আমরা বুঝি যে তার সাথে শ্রবনের একটা বড় সম্পর্ক আছে তবে যারা শুনতে পারে না, সঙ্গীত কি তাদের জন্য নয়? উত্তর টা হলো, হ্যাঁ। অন্যান্য শিল্পের মতোই সঙ্গীতও সবার জন্য এবং না দেখে কিংবা শুনেও যদি একজন শিল্পীর আবেগ অনুভব করা যায় সেখানেই শিল্পের সার্থকতা।
বিশ্বখ্যাত বয়ব্যান্ড বিটিএস এবং তাদের ভক্ত আর্মি- এরা বর্তমানে প্রায় সবার কাছেই পরিচিত। সেই আর্মিদের ৮ম জন্মবার্ষিকীর উপহার হিসেবে ব্যান্ডটি প্রকাশ করে তাদের নতুন গান “পার্মিশন টু ডান্স”। গানটির ইতিবাচক কথা এবং ভিডিও তে বর্ণ-বয়স নির্বিশেষে সবার উপস্থিতির জন্য মুহূর্তেই ইতিবাচক সাড়া পাওয়া শুরু করে। তবে, যা সবার নজর কেড়ে নিয়েছে তা হলো মূল নাচে তাদের সাইন ল্যাংগুয়েজ এর ব্যবহার এবং এটিই সৃষ্টি করলো এক অনন্য উদাহরণ।
এরপরই বিটিএস এর কোম্পানি বিগহিট মিউজিক তাদের অফিশিয়াল ঘোষণায় ব্যাখ্যা দেয় যে মূল নাচের কোরিওগ্রাফিতে ব্যবহার করা হয়েছে
“নাচ”, ” আনন্দ”, “শান্তি” শব্দের ইন্টারন্যাশনাল সাইন ল্যাংগুয়েজ।
*পার্মিশন টু ডান্স* গানটি কথা বলে করোনা মহামারি পরবর্তী এক সুন্দর এবং সুস্থ পৃথিবীর যেখানে থাকবে আনন্দ এবং শান্তি। মহামারির সময়ের হতাশা, দুঃখ কে মেনে নিয়ে নতুন উদ্যমে আবার সচল হবে থমকে যাওয়া সাধারণ জীবন। ইন্টারন্যাশনাল সাইন ল্যাংগুয়েজ ব্যবহারের লক্ষ্যই হলো এই বার্তা সকলের কাছে পৌঁছে দেয়া, যাতে যে হয়তো শ্রবণ প্রতিবন্ধকতার জন্য যে গানটা শুনতে পারছে না সেও যেন ভিডিওটি দেখে অন্যদের মতোই গানটি উপভোগ করতে পারে।
ইন্টারন্যাশনাল সাইন ল্যাংগুয়েজ এর ব্যাখ্যা:
–এক হাতের তালুর উপর অপর হাতের দুইটি আঙ্গুল নাড়ানোর “নাচ” শব্দটি উপস্থাপন করে।
-দুই হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি উঁচু করে এবং বাকি আঙুল গুলো হালকা বাঁকা করে পর্যায়ক্রমে চলমান রাখার অঙ্গভঙ্গি “আনন্দ” শব্দটি প্রকাশ করে।
–দুই হাত উঁচু করে ইংরেজি “ভি” অক্ষর তৈরি করা “শান্তি” শব্দটি উপস্থাপন করে।
নাচ এবং সাইন পাশাপাশি রেখে ভিডিও-
জুলাই হলো “ডিজ্যাবিলিটি প্রাইড মান্থ”। তার প্রতি সম্মান রেখে বিটিএস এর অফিশিয়াল টুইটার পেইজে যুক্ত করা হয়েছে ” হেয়ারিং এইড” এর ইমোজি।
সবকিছু মিলিয়েই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুহূর্তেই দেখা যায় ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া। একজন জানায় যে তার বোন যে কিনা বধির, সেও ভিডিও দেখেছে এবং সাইন দেখে বুঝে গিয়েছে যে তাকে নাচতে বলা হচ্ছে। কারো মা, কারো বাবা, কারো দাদা, কারো বন্ধু কিংবা কারো সহকর্মী যারা শুনতে পান না, তাদের সকলের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য আর্মিরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে বিটিএসের প্রতি এবং এখানেই বিটিএসের সার্থকতা।
পরবর্তীতে, WHO, ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের ডিরেক্টর জেনারেল ড.টেড্রোস আধানম গ্রেবিয়েসাস তার টুইটার পেইজ থেকে বিটিএস এর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তার মতে, পৃথিবীর ১.৫ বিলিয়ন মানুষ শ্রবণ প্রতিবন্ধকতার শিকার এবং সাইন ল্যাংগুয়েজ এর ব্যবহারের জন্য তারাও সঙ্গীত উপভোগ করতে পারবে যা তাদের জীবনে নিয়ে আসবে আনন্দ।
বিটিএস এর জন্য এটাই প্রথম নয়। এর আগেও তারা প্রমাণ করেছে যে প্রতিবন্ধকতা আছে এমন ভক্তকূলের পাশে তারা সবসময় আছে। যেমন- বিটিএসের কন্সার্টে একজন সাইন ল্যাংগুয়েজ জানা দোভাষীর উপস্থিতি সবসময় লক্ষ্য করা যায়। বিটিএসের সদস্য কিম তেইহিয়ুং(ভি) নিজেই আয়ত্ব করেছেন সাইন ল্যাংগুয়েজ এবং নিয়মিতভাবে তা ব্যবহার করে কুড়িয়ে নিয়েছেন প্রশংসা। আরেক সদস্য জাং হো-সক(জে-হোপ) তার ২৭ তম জন্মদিনে দৃষ্টি-শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা নিয়ে কাজ করা দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করেছেন ১৫০ মিলিয়ন কোরিয়ান ওন (প্রায় ১ কোটি ৮২ হাজার বাংলাদেশী টাকা)। এছাড়াও পিছিয়ে নেই বিটিএস আর্মিরাও, তারাও বিশ্বব্যাপী প্রতিনিয়ত দান করছে প্রতিবন্ধকতা নিয়ে কাজ করা দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে।
UN, ইউনাইটেড ন্যাশন্স এর ৭৫ তম সাধারণ অধিবেশনে বিটিএসের সদস্য কিম নামজুন এর বক্তব্যে বিশ্ব জেনেছিল ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলেই বিটিএসের জগতে সাদরে আমন্ত্রিত। তার সাথে যুক্ত হলো প্রতিবন্ধকতা আছে এমন মানুষও, বিটিএসের ৭ সদস্যের কাছে সবার প্রতি ভালোবাসাই সমান। “পার্মিশন টু ডান্স” গানের মাধ্যমে তারা আবার প্রমাণ করলো সঙ্গীতের আলাদা কোনো ভাষা নেই, সঙ্গীতের ভাষা ভালোবাসা এবং ভালোবাসাই হলো সর্বজনীন ভাষা।
কানেক্টিং ডিসঅর্ডার্স এর পক্ষ থেকে BTS এর প্রতি কৃতজ্ঞতা।
“পার্মিশন টু ডান্স” গানটি শুনতে এখানে ক্লিক করুন