কিংবদন্তিকে জানুন: ক্রিস্টি ব্রাউন

ক্রিস্টি ব্রাউন। একাধারে লেখক, কবি এবং চিত্রশিল্পী। নিঃসন্দেহে অসম্ভব গুণী একজন মানুষ। জন্ম ৫ই জুন ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে, ডাবলিনের একটি আইরিশ পরিবারে। মানুষ টিকে নিয়ে লেখার কারণ সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও তার সাফল্য অর্জন। 

জন্মের একবছর পরই চিকিৎসকরা উপলব্ধি করেন যে ক্রিস্টি জন্মেছেন গুরুতর সেরেব্রাল পালসি নিয়ে, যা একটি নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার। সেরেব্রাল পালসির কারণে ক্রিস্টি সম্পূর্ণ ভাবে প্যারালাইজড হয়ে গেলেও একমাত্র তার বাম পা ছিল সবল। চিকিৎসকরা তাকে পুনর্বাসনে পাঠানোর পরামর্শ দিলেও ক্রিস্টির মা তা মেনে নেন নি।

মা কখনোই হাল ছেড়ে দেন নি। মায়ের অক্লান্ত প্রচেষ্টার জন্যই ক্রিস্টি পড়তে শেখে এবং শুধু মাত্র বাম পা ব্যবহার করেই লেখতে শেখে। ক্রমশই শিল্প ও সাহিত্যের প্রতি তার প্রবল আকর্ষণ লক্ষ্য করা যায়। এই আকর্ষণ আরেক জন মানুষের নজরে পরে, তিনি সোশ্যাল ওয়ার্কার ক্যাট্রিওনা ড্যালাহান্ট। ব্রাউন পরিবারে নিয়মিত যাওয়া আসা করা শুরু করেন এবং সাথে আনেন ক্রিস্টির জন্য বই এবং আঁকাআঁকির সরঞ্জাম। কিছুদিনের মধ্যেই বাম পা দিয়েই ক্রিস্টি ছবি আঁকাও শুরু করেন।পরবর্তীতে থেরাপির মাধ্যমে যোগাযোগ এবং মোটর মুভমেন্টেও অনেক উন্নতি দেখা দেয়।

আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও ক্রিস্টি ব্রাউন সেন্ট ব্রেন্ডান’স স্কুল-ক্লিনিকে ভর্তি হোন যেখানে তার সাথে পরিচয় হয় ড. রবার্ট কলিসের সাথে। ড. কলিস তাকে ঔপন্যাসিক হিসেবে আখ্যা দেন এবং তার সহযোগিতাতেই প্রকাশিত হয় ক্রিস্টি ব্রাউনের আত্মজীবনী “দ্যা লেফট ফুট”। 

মুহূর্তের মধ্যেই যেন “দ্যা লেফট ফুট” সাড়া ফেলে দেয় সাহিত্যের জগতে। “দ্যা লেফট ফুট” অবলম্বনে ১৯৮৯ সালে নির্মিত হয় একটি চলচ্চিত্র যাতে ক্রিস্টি ব্রাউন এর চরিত্রে অভিনয় করে ডেনিয়েল ডে লুই অর্জন করে নেন একাডেমি এওয়ার্ড। পরবর্তীতে ক্রিস্টি ব্রাউনের আরেকটি মাস্টারপিস “ডাউন অল দ্যা ডেস” বইটিও হয় ইন্টারন্যাশনাল বেস্টসেলার এবং অনূদিত হয়েছে ১৪টি ভাষায়। ক্রিস্টি ব্রাউনের অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে আছে “এ শেডো অন সামার”, “ওয়াইল্ড গ্রো দ্যা লিলিস”, “এ প্রমিসিং ক্যারিয়ার”। এছাড়াও প্রকাশিত হয়েছে ৩টি কবিতার বই- “কাম সফটলি টু মাই ওয়েভ”, “ব্যাকগ্রান্ড মিউজিক” এবং “অফ স্নেইলস এন্ড স্কাইলার্কস”।

তার আঁকা তিনটি উল্লেখযোগ্য চিত্রকর্ম- “গ্যারেজ ইন দ্যা স্নো”, “সেইলবোটস অন আ রিভার” এবং “হ্যালেন রিক্লাইনিং”।

চিকিৎসকদের মতে যে মানুষটা ছিলেন মানসিকভাবে অক্ষম এবং যে কখনোই স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবেন না, সেই মানুষটাই পেয়েছেন বিশ্বখ্যাতি। মা এবং কাছের মানুষদের চেষ্টায় এবং নিজের সমস্তটা দিয়ে ক্রিস্টি ব্রাউন পৌঁছেছেন সাফল্যের উচ্চ শিখর এ। প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্তেও অদম্য চেষ্টা দিয়ে যে সব করা সম্ভব ক্রিস্টি ব্রাউনের জীবন থেকে তাই ই আমরা শিক্ষা পাই।

Leave a Comment

Skip to content