একজন মানুষের শারীরিক সীমাবদ্ধতা উতরে যাওয়ার সংগ্রাম, স্বপ্নের প্রতি ডেডিকেশন, ভালোবাসার উষ্ণ অনুপ্রেরণা, পারিবারিক ভাঙাগড়া থেকে নিজেকে প্রমাণ করার অ থেকে চন্দ্রবিন্দু ফুটিয়ে তোলা চলচ্চিত্র দ্য থিউরি অব এভরিথিং।
দা থিওরি অফ এভরিথিং খুবই জনপ্রিয় একটি চলচ্চিত্র যা পাঁচটি শ্রেণীতে অস্কারের জন্যে মনোনীত হয়। এই বায়োপিক নির্মিত হয় বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংয়ের জীবনীর উপর ভিত্তি করে। স্টিফেন হকিং যখন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন, মাত্র ২১ বছর বয়সে তিনি মোটর নিউরন ডিজিজ নামক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হন যার ফলশ্রুতিতে তিনি ধীরে ধীরে হাঁটা চলা এবং কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলতে থাকতেন। যখন তার এই রোগ ধরা নির্নয় করা হয় তখন ডাক্তাররা বলেন তিনি হয়তো সবোর্চ্চ দুই বছর বাঁচবেন। সামনে নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও তিনি দমে যান না। তিনি তার রিসার্চ চালিয়ে যেতে থাকেন এবং একসময় তার গবেষণা বিগ ব্যাং থিওরির কোয়ান্টামিয় ব্যাখ্যা, গানিতিকভাবে কৃষ্ণগহ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করার মাধ্যমে সময় এবং মহাবিশ্বের নয়াধারণা পুরো পৃথিবীতে হৈ চৈ ফেলে দেয়। একসময় তিনি কথা বলার শক্তি পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেন এবং বিকল্প যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে স্পেলিং বোর্ডের মাধ্যমে যোগাযোগ করতেন। স্পেলিং বোর্ডের আরেক নাম হচ্ছে পার্টনার এসিস্টেড স্ক্যানিং যেখানে বাকপ্রতিবন্ধী ব্যাক্তির সামনে তার পার্টনার কিছু শব্দ রাখেন এবং ঐ ব্যাক্তিটি ঐ নির্দিষ্ট শব্দগুলোর মধ্যে থেকে তার কাঙ্ক্ষিত শব্দ পছন্দ করে সংজ্ঞাপন করেন। হকিং একটি বিশেষ কম্পিউটারের সাহায্যে কথা বলতেন যাতে ভয়েস সিনথেসাইজার ইনপুট করা ছিল। এইভাবেই তিনি তার ইন্টারন্যাশনাল বেস্ট সেলার বই এ ব্রিফ হিস্টোরি অফ টাইম লিখেন।
দ্য থিওরি অব এভরিথিং এ স্টিফেন হকিং এর সংগ্রাম, সাফল্যের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি যে দিকটি ফুটে উঠেছে তা হচ্ছে তাঁর স্ত্রী জেন হকিংয়ের সাথে তার পরিচয় এবং কীভাবে ধীরে ধীরে তাদের সম্পর্কের পরিণতি হয়।
শারিরীক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও মানুষ তার ইচ্ছাশক্তি এবং প্রচন্ড মনোবলের মাধ্যমে যে অসাধ্য সাধন করতে পারে তা এই মুভিতে তুলে ধরা হয়েছে। মুভিটিতে স্টিফেন হকিংয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেতা এডি রেডমেইন যার অসাধারণ অভিনয় মুভিটিকে প্রাণ দিয়েছে এবং এই মুভিটিতে তার অসাধারণ অভিনয়ের জন্যে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে অস্কারজয়ী হন।
দ্য থিউরি অব এভরিথিং একটি অনুপ্রেরণাদায়ী চলচ্চিত্র। এখানে একজন মানুষের প্রাথমিক যোগাযোগ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা এবং বিকল্প যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেও যে সফলতার শিখরে পৌছানো সম্ভব তার একটি বাস্তব দৃষ্টান্ত প্রদর্শন করা হয়েছে।