রূপালি পর্দায় তারা: তারে জামিন পার

তারে জামিন পার চলচ্চিত্রটি বলিউডের অন্যতম একটি জনপ্রিয় এবং বহুল আলোচিত মুভি। এই মুভি শুধু ভারতেই নয়, ভারতের বাইরেও আন্তর্জাতিক ভাবে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করে। সমাজের একটি চলমান সমস্যা এই মুভির  প্রধান  আলোচ্য বিষয়। মুভিটিতে অভিনয় করেছেন বলিউড সুপারস্টার পারফেকশনিস্ট খ্যাত আমির খান এবং শিশু শিল্পী দার্শিল সাফারি,যার ইশান চরিত্র সকলকে মুগ্ধ করতে বাধ্য।

চলচ্চিত্রটির কাহিনী একটি আট বছরের বাচ্চা ইশানকে নিয়ে৷ ইশান পড়াশোনায় অতোটা ভালো না। সত্যি বলতে সে কি ইচ্ছা করেই নিজের লেখাপড়া, গতানুগতিক হোমওয়ার্ক, এসাইনমেন্ট নিয়ে গাফিলতি করে? না, পড়ালেখা কঠিন মনে হওয়া, পড়তে অনীহার  পিছনের কারণটি হলো তার ডিসলেক্সিয়া। ডিসলেক্সিয়া হচ্ছে এক ধরনের শিখন বৈকল্য যেখানে বাচ্চার অক্ষর চিনতে অসুবিধা হয়। বিশেষ করে বাচ্চা ইংরেজী বি এবং ডি ও  সিক্স এবং নাইন এর মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না। কিন্তু ইশানের বাবা মা তার এই সমস্যা বুঝতে পারেন না। তারা ভাবে ইশান সব ইচ্ছা করেই করছে শুধুমাত্র পড়াশোনা না করার জন্যে। পরে তারা তাকে বোর্ডিং স্কুলে পাঠিয়ে দেয়। বোর্ডিং স্কুলের কঠোর শাস্তি আর মা বাবার থেকে দূরে থাকার কারণে ইশান ডিপ্রেশন এ ভুগতে থাকে৷ ধীরে ধীরে সবার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয় সে। 


তবে ইশানের এভাবে নিজেকে গুটিয়ে নেয়ার কারণ কি এতটুকুই? ইশানকে তার মা-বাবা একটিবারও কি বোঝার চেষ্টা করেছিলেন? তাকে পর্যাপ্ত সময় দিয়েছেন? তার আগ্রহ, অভিযোগ এর কথা জানতে চেয়েছে্ন? না, বরং সে পেয়েছে শুধু শাসন, হয়েছে তুলনার বস্তু। তার সাথে যোগ হয়েছে শিক্ষক, সহপাঠীদের বিরূপ আচরণ এবং অচেনা পরিবেশের একাকীত্ব।  


ইশান এর লেখাপড়ায় আগ্রহ না থাকলেও তার রয়েছে প্রখর কল্পনাশক্তি। তার কল্পনার রাজ্য রঙ্গীন, সে রাজ্য সুন্দর। আর সেই সাথে তার ক্ষমতা আছে সেই রাজ্যকে রঙ-তুলির মাধ্যমে বাস্তবে পরিণত করার।
 
একদিন ইশানের বোর্ডিং স্কুলে আসেন নিকুম্ভ নামের নতুন একজন আর্টের শিক্ষক, যে ইশানের এই সমস্যাটা ধরতে পারেন এবং ওকে এই সমস্যাটা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেন বিভিন্ন ট্রেনিং এক্সারসাইজের মাধ্যমে। ইশানের সুপ্ত প্রতিভাকেও সে বিকশিত করতে সাহায্য করে। নিকুম্ভ যেন ইশানের জীবনে আশীর্বাদ স্বরুপ, একজন আদর্শ শিক্ষক ছাড়াও সে ইশানের যোগ্য অভিভাবক, তার প্রকৃত বন্ধু।

প্রতিটা শিশুই অনন্য, তাদের প্রত্যেকের এই পৃথিবীকে দেখার চোখ আলাদা এবং তাদের প্রত্যেকের সুষ্ঠূ বিকাশের জন্য দরকার স্নেহ, ধৈর্য ও ভালোবাসা। একটি বাগানের সব গাছকে একরকম পরিচর্যা দিলে যেমন এক-দুটো গাছ মুষড়ে পরে তেমনি শিশুদের ক্ষেত্রেও এক। প্রতিটি শিশুকে তাদের নিজেদের মতো করে বেড়ে উঠার পরিবেশ দেয়া খুব জরুরি। 


এছাড়াও একটি শিশুর বিকাশে মা-বাবার গুরুত্ব কতটুকু? শুধুমাত্র খাবার, পোশাক, শিক্ষা, বাসস্থানের নিশ্চয়তাই কি সব? একদমই না, তার সাথে সন্তানের মনের কথা শোনা, তাদের সাথে সময় কাটানো, স্নেহ মমতায় তাদের আঁকড়ে ধরে রাখাও অনেক জরুরি। মা-বাবার বাচ্চাদের উপর যে পড়াশোনা নিয়ে অতিরিক্ত প্রেশার, তাদের প্রতিভাকে দমিয়ে রাখা, অন্যের সাথে তুলনা, খারাপ ব্যবহার এবং এর ফলে ছোট বাচ্চাটাকে যে কী পরিমাণ মেন্টাল ট্রমা এর মধ্য দিয়ে যেতে হয়  সেই ব্যাপারটিই উঠে এসেছে এই সিনেমায়। পাশাপাশি  এই চলচ্চিত্রে একটি বাচ্চার কল্পনাশক্তি যে কতোটা  অসাধারণ হতে পারে এবং পুঁথিগত বিদ্যার বাইরে বাস্তববিদ্যা যে কতোটা গুরুত্বপূর্ণ সেটাও দেখানো হয়েছে। দেখানো হয়েছে একজন সমাজসেবককে  যিনি অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের  নিয়ে কাজ করেন। অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা যে সমাজের বোঝা নয় এবং তারা অন্য আর আট দশটা স্বাভাবিক বাচ্চার মতো সবকিছু করতে পারে,  শুধু প্রয়োজন তাদের প্রতি একটু  ভালোবাসা এবং যত্ন এই দিকটিও মুভিটিতে প্রচ্ছন্ন ভাবে ফুটে উঠেছে।

There have been such gems amongst us, who changed the course of the world because they could look at the world differently. Their thinking was unique and not everyone understood them. They were opposed, yet they emerged winners and the world was amazed.

লেখক: জিহাদ আন নুশায়ের, নুুসাইবা মোর্শেদ 

Leave a Comment

Skip to content